আদালতে নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন মুফতি হান্নান ০৪ ঠা আগস্ট, ২০০৮ সকাল ৮:৫১ আদালতে নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন মুফতি হান্নান কোর্ট রিপোর্টার : ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, তার ভাই মহিবুল্লাহ ও শরীফ সাহেদুল আলম তাদের ওপর লোমহর্ষক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ করেছেন। গতকাল এ মামলার চার্জ গঠনের শুনানি শুরুর আগে করা তিনটি পৃথক আবেদনে নিজেদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চালানো নির্যাতনের বর্ণনা দেন তারা। আগে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারেরও আবেদন জানিয়েছেন তারা। এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের আবেদনের পর ঢাকা মহানগর দ্বিতীয় অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম রাশেদুজ্জামান রাজা আগামী ৩১শে আগস্ট এ মামলার শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করেন। এ মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি আবদুস সালাম পিন্টুর আইনজীবী মোহাম্মদ আলী শুনানির জন্য সময় চেয়ে আবেদন জানিয়ে আদালতকে বলেন, মামলার চার্জশিট ও জব্দ তালিকাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অনুলিপির জন্য আবেদন করার পরও তা পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় সময় প্রয়োজন। মামলার অন্য আসামি হোসাইন আহমেদ তামিম, আবুল কালাম আজাদ ও জাহাঙ্গীর আলমের আইনজীবীরাও একই কথা বলেন। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর এহসানুল হক সমাজী আদালতকে অনুরোধ করে বলেন, আদালত যেন এমন একটি সময় ঠিক করে দেন যাতে পরে আর আদালতের কাছে সময় চাইতে না হয়। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক চার্জ গঠনের জন্য ৩১শে আগস্ট দিন ধার্য করেন। সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ছাড়াও মামলার অন্য আসামি মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা আবু সাইদ, আরিফ হাসান সুমন, আবুল কালাম আজাদ এবং জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে জামিন আবেদন করা হয়। এ বিষয়েও ৩১শে আগস্ট শুনানির দিন ধার্য করে আদালত। আবদুস সালাম পিন্টু, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ আটক ১৩ আসামিকেই গতকাল আদালতে হাজির করা হয়। আবদুল হান্নান, তার ভাই মহিবুল্লাহ ও শরীফ সাহেদুল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন জানান। মুফতি হান্নান তার আবেদনে বলেন , আমাকে ৭৭ দিন একটানা রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ড চলাকালে ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো হয়। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আনা হয়। র্যাব অফিসার ও সিআইডি তাদের ইচ্ছামত কাগজে লিখে তা আমার স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দি বলে চালিয়ে দিয়েছে। ১১ মাস সিলেট থাকার পর সেখান থেকে সরাসরি র্যাব জেআইসিতে আমাকে নেয়া হয়। সেখানে টর্চার সেলে র্যাব অফিসাররা আমাকে বলেন, তোমাকে এখানে কেন আনা হয়েছে জান? আমি বলি জানি না। এক র্যাব অফিসার আমাকে বলে, তোমাকে ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিষয়ে যা বলব তা স্বীকার করতে হবে। তা না হলে আগের রিমান্ডের চেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি তোমাকে মোকাবেলা করতে হবে। অথবা দুনিয়া থেকে চির বিদায় নিতে হবে। তোমাকে এখন কিছু বলতে হবে না। আজ রাত তোমাকে সময় দেয়া হলো। কালকে রিমান্ডে আনা হবে তখন বলবে। পরের দিন আমাকে রিমান্ডে নেয়া হলো। আমি ২১শে আগস্ট গ্রেনেড মামলা সম্পর্কে কিছুই জানি না বলতেই শুরু হলো আমার ওপর অমানুষিক বর্বর নির্যাতন। উলঙ্গ করে পুরুষাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দেয়া হয়। নাকে, কানে, জিহ্বায়, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বৈদ্যুতিক চার্জ, বেদম লাঠিপেটা, দু'হাতের একটি করে আঙ্গুলের নখ তুলে ফেলা হয়। নখের ভিতরে আলপিন ঢুকানো হয়। পায়ের আঙ্গুলগুলো পাথর দিয়ে থেঁতলিয়ে দেয়া হয়। সম্মুখে হাজার হাজার ভোল্টের বাল্ব জ্বালিয়ে রেখে আমার মুখসহ বিভিন্ন জায়গা ঝলসে দেয়। যার চিহ্ন আমার শরীরে দৃশ্যমান। আমার দু'টি পা বেঁধে উপরের দিকে রাখা হতো। ভিজা গামছা নাকে ও মুখে রেখে মরিচ মিশানো গরম ও ঠাণ্ডা পানি ঢালা হয়। আমাকে বলে যে, আমাদের কথা শোন, তোমাকে এ মামলায় রাজসাক্ষী করা হবে। মুফতি হান্নান আরও উল্লেখ করেন, আমাকে রাজসাক্ষীর প্রলোভন দিয়ে পুলিশ ও র্যাবের কড়া প্রহরায় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে উপস্থিত করে। তখন সেখানে উপস্থিত ছিল র্যাব অফিসার ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে এ মামলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে আমি বলি কিছুই জানি না। তখন কর্মকর্তারা ম্যাজিস্ট্রেটকে বলেন, আপনি দেখে দেখে লিখে নিন। ম্যাজিস্ট্রেট কলম দিয়ে সম্পূর্ণ প্রস্তুতকৃত জবানবন্দি লিখে নেন। আমাকে জবানবন্দিতে স্বাক্ষর করতে বললে আমি অস্বীকৃতি জানাই। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের পাশে বসে থাকা এক ব্যক্তি তার হাত দিয়ে আমার হাত ধরে স্বাক্ষর করে। এসময় আমি মেঝেতে শোয়া ছিলাম। এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আমার নয়। আমি ওই জবানবন্দি প্রত্যাহার করছি। মুন্সি মহিবুল্লাহ আবেদনে বলেন, ২০০৫ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর র্যাবের হাতে ধরা পড়ি। বিনা গ্রেপ্তারে র্যাব চার মাস আমাকে অন্ধকার কুঠরিতে আটক রেখে অমানুষিক অত্যাচার চালায়। চার মাস পর জেলহাজতে পাঠায়। এক বছর পর আমাকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৭৩ দিন রিমান্ডে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালায় এবং বিভিন্ন মামলায় স্বীকারোক্তি নেয়ার চেষ্টা চালায়। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় জেআইসিতে রিমান্ডে নিয়ে র্যাব আমার শরীরও নাকে গরম পানি ঢালে। পায়ের নিচে মোটা বেত দিয়ে আঘাত করে। কাঁচের বোতলে গরম পানি ভর্তি করে শরীরে ঢালে। আমার হাত-পায়ের আঙুলে সুঁই ঢুকানো হয়। শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে চামড়া তুলে নেয়। পুরুষাঙ্গে, কানে, নাকে, জিহ্বায় বৈদ্যুতিক শক দেয়া হয়। সীমাহীন অত্যাচারে আমি দিশেহারা ও অপ্রকৃতস্থ হয়ে পড়ি। এই অবস্থায়ই গত বছরের ১লা নভেম্বর কড়া পুলিশ ও র্যাবের পাহারায় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নেয়া হয়। পুলিশ বাহিনীর লোক সঙ্গে থাকায় তাদের ভয়ে এবং নিজের প্রাণের ভয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে এক প্রস্তুতকৃত কাগজে স্বাক্ষর করি। এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আমার নয়। তাই আমি তা প্রত্যাহার করলাম। একই মামলার অপর আসামি শরীফ সাহেদুল আলমও তার ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন জানান। ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগ নেতা আইভি রহমানসহ ২৩ জন নিহত ও সাংবাদিকসহ কয়েক শ' আহত হন। হামলার পর দিন মতিঝিল থানার তখনকার উপ-পরিদর্শক শরিফ আহমেদ একটি মামলা করেন। এর তদন্তের দায়িত্ব প্রথমে দেয়া হয় মতিঝিল থানার এএসআই আমির হোসেনকে। পরে দায়িত্ব দেয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশের এএসআই শামসুল ইসলামকে। এরপর তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডি'র এএসপি আবদুর রশীদ ও মুন্সি আতিকুর রহমান। স্পেশাল পুলিশ সুপার রুহুল আমিন মামলাটি তদারক করেন। http://www.manabzamin.net/page1.htm আল্লাহ যাকে যখন ইচ্ছা ক্ষমতা দান করেন,মাইনাস টু ফরমুলায় তাই হাসেন http://www.microscopiceye.blogspot.com/ |