অবিশ্বাসী বন্ধুদের প্রচারণা দেখিয়া-শুনিয়া মনে হইতেছে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়া আন্তর্জাতিক মহলের ঘুম হারাম হইবার জোগাড় হইয়াছে। নচেৎ কিছুদিন পরপরই আন্তর্জাতিক কোন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা কমিটিকে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রশ্নে এমন সব হতাশাব্যঞ্জক চিত্র তুলিয়া ধরিতে দেখা যাইবে কেন? 'গবেষণালব্ধ' ধ্যান-ধারণা ও ভবিষ্যদ্বাণীর মাধ্যমে তাহারা হতাশা এবং অনিশ্চয়তার ঘেরাটোপে বন্দী করিয়া বাংলাদেশের অদম্য সাহসী ও পরিশ্রমী মানুষদের হতোদ্যম করিয়া দিতে চাহিতেছে। দেখা গিয়াছে যে, হাজারও প্রতিকুলতা, প্রতিবন্ধতা এবং ঝড়ঝঞ্ঝা সত্ত্বেও যখনই আমরা নানা প্রকার দুর্যোগ-দুর্বিপাক এবং দীনতা-হীনতা কাটাইয়া নিজের পায়ে দাঁড়াইবার হিম্মত সঞ্চয় করি, ঠিক তখনই দেশী-বিদেশী মহল হইতে একরাশ হতাশার কথা ছড়াইয়া দিয়া দেশবাসীকে বিষণœ, হতবুদ্ধি, হতোদ্যম এবং হতচকিত করার প্রয়াস-প্রচেষ্টা চলিতে থাকে। কি মতলবে ইহারা বাংলাদেশের মানুষের মনে এই জাতীয় জুজুর ভয় ঢুকাইয়া দিতে চাহে উহা তলাইয়া দেখাটা জরুরি। বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ রাষ্ট্র হিসাবে আখ্যা দিয়া প্রকারান্তরে বাংলাদেশের কপালে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের তকমা আঁটিয়া দেওয়ার দুরভিসন্ধিতে কোন কোন মহল তৎপর কিনা উহা গভীরভাবে ভাবিয়া দেখার সময় আসিয়াছে। শুধু যে দেশটির স্থিতিশীলতা প্রশ্নেই তাহারা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে তাহা নহে, দেশটির ভবিষ্যৎ ভৌগোলিক অস্তিত্ব লইয়াও প্রায়ই উদ্বেগ-আশংকা ব্যক্ত করিয়া থাকে। বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল অদূর ভবিষ্যতে সাগরের গর্ভে তলাইয়া যাইবে কিংবা আগামীতে ক্ষণে ক্ষণে নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাকে দেশটির টিকিয়া থাকাই দায় হইবে ইত্যাকার নানান শংকার কথা বেশ কিছুকাল যাবৎ আমরা আন্তর্জাতিক মহলের কণ্ঠে উচ্চারিত হইতে শুনিতেছি। অথচ বাংলাদেশের মানুষ যে ফি-বছর প্রবল বন্যা, ভাঙ্গন এমনকি সিডরের ন্যায় ধ্বংসযজ্ঞকেও মোকাবিলার মানসিক শক্তি এবং সামর্থ্য রাখে ইহা তাহারা বেমালুম ভুলিয়া যান। রবিবার আমাদের একটি সহযোগী প্রথম পাতায় মার্কিন কংগ্রেসে পেশকৃত একটি প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু 'বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ রাষ্ট্রের তালিকায়' শিরোনামে লিড নিউজ হিসাবে প্রকাশ করিয়াছে। ইহা পাঠান্তে যে কোন দেশপ্রেমিক নাগরিকের মনেই উহার বস্তুনিষ্ঠতা, গ্রহণযোগ্যতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা লইয়া প্রশ্ন না উঠিয়া পারে না। তাই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার শাহ্দীন মালিকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তি সঙ্গত কারণেই এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কিত 'কটুকাটব্য'কে প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন। প্রতিবেদনটিতে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, পুলিশ, সামরিক বাহিনী, বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসনকে দুর্বল হিসাবে আখ্যায়িত করিয়া বাংলাদেশকে 'অ্যালার্ট স্টেট' বা ঝুঁকিপূর্ণ রাষ্ট্রের তালিকায় রাখা হইয়াছে। উহাতে ১৭৭টি রাষ্ট্রের মধ্যে তথাকথিত ব্যর্থ রাষ্ট্রের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১২ নম্বরে সাব্যস্ত করা হইয়াছে। প্রতিবেদনটির বক্তব্য পাঠে মনে এই প্রশ্ন জাগে যে, প্রতিবেদন প্রণেতারা কোন বিশেষ মতলব হাসিলের উদ্দেশ্যকে মাথায় রাখিয়া ইহা প্রণয়ন করেন নাইতো? তাহা না হইলে আমরা যখন শক্তিশালী গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য সকলে মিলিয়া প্রয়াস-প্রচেষ্টা চালাইতেছি এবং এক্ষেত্রে কিছু সাফল্যও দেখা যাইতেছে তখন কেন বাংলাদেশ সম্পর্কে এমন হতাশাব্যঞ্জক কথা বলা হইতেছে? কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিস নামক একটি সংস্থা কংগ্রেসের পক্ষে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করিয়াছে। কংগ্রেস সদস্যদের নীতি-নির্ধারণের ব্যাপারে এই সংস্থাটির প্রতিবেদন সহায়ক ভূমিকা পালন করিয়া থাকে। প্রতিবেদনে আরও বলা হইয়াছে, 'ঝুঁকিপূর্ণ রাষ্ট্রগুলি সন্ত্রাসবাদ, আন্তর্জাতিক অপরাধ, পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার ও আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে বলিয়া ইহারা অন্যদের জন্য নানান হুমকির কারণ হইয়া দেখা দেয়। জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা তাহাদের বিচরণের উর্বর ক্ষেত্র হিসাবে দুর্বল রাষ্ট্রগুলিকেই বাছিয়া লয়।' ইহা না হয় মানা গেল, কিন্তু বাংলাদেশকে দুর্বলরূপে চিহ্নিত করিয়া উহাকে কাহাদের টার্গেটে পরিণত করার চেষ্টা হইতেছে- এই প্রশ্নটি নিশ্চয়ই এক্ষেত্রে অবান্তর নহে। আমাদের অভিজ্ঞতায় বলে, একটি জাতির মনে হতাশা, হীনমন্যতা এবং অনিশ্চয়তার অন্ধকার ঘনাইয়া তুলিতে পারিলেই কুচক্রীদের দারুণ লাভ হয়। কেননা ইহাতে দুর্বল আরও হীনবল হইয়া পড়ে এবং মানসিকভাবে এক প্রকার দীনতা সে জাতিকে পাইয়া বসে। তখন সেই হতাশাপীড়িত, মনোবল ও সংবিৎহারা জাতিকে বশংবদ বানাইয়া কুচক্রী মহলের পক্ষে নিজেদের দুরভিসন্ধি চরিতার্থ করা সহজতর হয় বৈকী! জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা বা সমুদ্রগর্ভে তলাইয়া যাওয়া কিংবা রাষ্ট্র ব্যবস্থায় গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করিতে আমরা কৃতসংকল্প। একাত্তরে দুনিয়া কাঁপানো ঐক্য গড়িয়া আমরা নিজেদের জন্য একটি ঠিকানা অর্জন করিয়াছি। আগামীতেও এই দেশ রক্ষায় নিজেদের বুদ্ধি-মেধা-প্রজ্ঞার স্বাক্ষরও যে রাখিব ইহা বোধকরি আমাদের ইতিহাসের দিকে একটু দৃকপাত করিলেই অনুধাবন করিতে পারি। সুতরাং, যাহারাই যে ভয়ই দেখাক না কেন, আমরা উহাতে ভীত বা শংকিত নহি। আমরা শুধু বাংলাদেশের মানুষকে হতোদ্যম ও হতভম্ব করার এই জাতীয় প্রচারণা বন্ধ করার জন্য অবিশ্বাসী বন্ধুদের প্রতি আহ্বান জানাই http://www.ittefaq. আল্লাহ যাকে যখন ইচ্ছা ক্ষমতা দান করেন,মাইনাস টু ফরমুলায় তাই হাসেন http://www.microsco |
MARKETPLACE
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch format to Traditional
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe
.
__,_._,___