যে কোনোদিন মোশাররফের পদত্যাগ দেশত্যাগের জন্য বিশেষ বিমান প্রস্তুত
১৯৯৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসার পর মোশাররফের রাজনৈতিক জীবনে এমন কঠিন সময় আর আসেনি। গত ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে বিরোধী দল বিজয়ী হওয়ায় তার ভাগ্য বিপর্যয় ঘটে। ধারণা করা হচ্ছিল, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন এবং পিপিপি'র কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলী জারদারির সঙ্গে লিয়াজোঁ করে কোনো রকমে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সক্ষম হবেন। কিন্তু গত ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্র মোশাররফকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পিপিপি'কে গ্রীন সিংনাল দেয়ায় তার পতন ত্বরান্বিত হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ একটি বিশেষ বার্তা দিয়ে মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক উপ-সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন নেগ্রোপন্টেকে ইসলামাবাদ পাঠাচ্ছেন। নেগ্রোপন্টে কি বার্তা নিয়ে আসছেন তা প্রকাশ করা না হলেও বুঝা যাচ্ছে যে, সেটি প্রেসিডেন্ট মোশাররফের প্রতি পদত্যাগের বার্তা ছাড়া অন্য কিছু হওয়ার কথা নয়। এদিকে, পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার আসিফ আহমেদ আলী প্রেসিডেন্ট মোশাররফকে পদত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছেন। মুসলিম লীগ (এন) তাকে দেশত্যাগের সুযোগ দেবে না জানিয়ে দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে মোশাররফের সর্বশেষ অবস্থা কি তা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে না। গত বৃহস্পতিবার তিনি পাঞ্জাবের সাবেক গর্ভনর লে. জেনারেল খালিদ মকবুলের সম্মানে দেয়া এক ভোজসভায় যোগদান করেন। সেখানে তিনি তার পদত্যাগ করার খবরগুলোকে 'গুজব' বলে উড়িয়ে দেন। কোনো কোনো সূত্র বলছে, তিনি গৃহবন্দি। আবার কোনো কোনো সূত্র বলছে, তার বিরুদ্ধে পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল মীর্জা আসলাম বেগের উক্তি থেকে বুঝা যায় যে, মোশাররফ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন। জেনারেল আসলাম বেগ দাবি করছেন যে, সাবেক জেনারেল মোশাররফের বাসভবন 'আর্মি হাউস' সেনাবাহিনীর নজরদারিতে রয়েছে। রাওয়ালপিন্ডি সেনানিবাসে তার বাসবভন থেকে কমান্ডো ইউনিট প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। তার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ১১১তম ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার আসিম বাজোয়াকেও অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। ব্রিগেডিয়ার বাজোয়া ছিলেন মোশাররফের অনুগত। ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর মোশাররফের অনুকূলে সামরিক অভ্যুত্থানে ব্রিগেডিয়ার বাজোয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তার অধীনস্থ ১১১তম ব্রিগেড রাজধানী ইসলামাবাদের স্পর্শকাতর স্থাপনাগুলো দখল করে নেয়। গত বছরের জুলাইয়ে ইসলামাবাদে লাল মসজিদে সামরিক অভিযানের পুরোভাগে ছিল মোশাররফের অনুগত এ ব্রিগেড। নিকট অতীতের এসব ঘটনার আলোকে ১১১তম ব্রিগেডের কমান্ডার পদে বাজোয়ার স্থলে ব্রিগেডিয়ার ফাহিম রাওয়ের নিযুক্তি গভীর জিজ্ঞাসার জন্ম দিয়েছে। ব্রিগেডিয়ার বাজোয়াকে যেদিন বদলি করা হয়, ঠিক সেদিন ২৮ মে রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্ট হাউসে মোশাররফের সঙ্গে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আশফাক পারভেজ কায়ানি বৈঠক করেন। তাদের মধ্যে দীর্ঘ সাড়ে তিন ঘণ্টা বৈঠক চলে। দু'জন কি নিয়ে কথা বলেন তা প্রকাশ করা হয়নি। তবে পরদিন ২৯ মে পাকিস্তানের ইংরেজী দৈনিক দ্য নিউজ মোশাররফের ঘনিষ্ঠ সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এক প্রতিবেদনে জানায়, 'যে কোনো সময় প্রেসিডেন্ট পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন। ক্ষমতায় থাকার বাসনা ত্যাগ করে তিনি অবসরে যেতে মনস্থির করে ফেলেছেন।' অন্যদিকে, পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ঠ সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে খালিজ টাইমসের আরেক খবরে বলা হয়, মোশাররফের বিদায় নেয়া অনিবার্য। এ ব্যাপারে আর কোনো সন্দেহ নেই। তবে কখন এবং কিভাবে তিনি বিদায় নেবেন সেটাই এখন প্রশ্ন। পদত্যাগ করলেও মোশাররফ পার পাবেন কিনা তাও একটি প্রশ্ন। মুসলিম লীগ (এন) রাষ্ট্র্রদ্রোহিতার অভিযোগে তার বিচার করার ঘোষণা দিয়েছে। আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান লে. জেনারেল আসাদ দুররানী বলেছেন, সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্যগণ মনে করেন যে, সেনাবাহিনী প্রধান এবং অবৈধ প্রেসিডেন্ট হিসাবে ৯ বছর তিনি যে অপরাধ করেছেন সে জন্য অবশ্যই তার শাস্তি হওয়া উচিত। মোশাররফের অনুগত মুসলিম লীগ (কায়েদ)ও তার বিচার দাবি করছে। এ দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ ওয়াসি সামরিক আদালতে বিচারের জন্য মোশাররফকে সেনাবাহিনীর হাতে সোপর্দ করার দাবি জানিয়েছেন। সংবিধান বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, ৩ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট মোশাররফের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা ছিল অসাংবিধানিক এবং এ অপরাধে পাকিস্তান সংবিধানের ৬ নম্বর অনুচ্ছেদের আওতায় বিচারে তার মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। -খালিজ টাইমস অবলম্বনে সাহাদত হোসেন খান অদক্ষ তত্ববধায়কদের জন্য দেশের প্রতিদিনের ক্ষতি কত কোটি টাকা? |
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch format to Traditional
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe
__,_._,___